অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের পোস্টে। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে আপনি আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটি ব্যবহার করে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করবেন। সাধারণত, আপনাদের ভিতরে অনেকেই আছেন যাদের জন্ম নিবন্ধনে বানানে ভুল রয়েছে, জন্ম তারিখে ভুল রয়েছে অথবা পিতা-মাতার নামের বানানে ভুল রয়েছে।
তারা এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে এবং কোন জায়গায় গিয়ে আবেদন পত্রটি জমা করবেন ইত্যাদি বিষয়ে জানতে পারবেন। তাই ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য প্রথমে আপনার মোবাইল অথবা কম্পিউটার থেকে যেকোনো একটি ব্রাউজার ওপেন করুন। তারপর সার্চ অপশনে bdris.gov.bd লিখে সার্চ করুন। তাহলে আপনার সামনে এমন একটি ইন্টারফেস Open হবে।
সেখানে দুটি থ্রি ডট অপশন দেখতে পাবেন। এখন আপনি প্রথম থ্রি ডট অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনাকে পরবর্তী অপশনে নিয়ে যাবে এবং সেখানে চারটি অপশন দেখতে পাবেন। যেমন:
- হোম
- জন্ম নিবন্ধন
- মৃত্যু নিবন্ধন এবং
- ব্যবহারকারী সংযোজন (ওটিপি প্রাপ্তির পর)
এখন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য ‘জন্ম নিবন্ধন’ অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনাকে পরবর্তী অপশনে নিয়ে যাবে এবং সেখানে অনেকগুলো অপশন দেখতে পাবেন। যেমন:
- জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থা
- জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনঃ মুদ্রন
- সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন
- নতুন নিবন্ধন তথ্য অনুসন্ধান
- জন্ম নিবন্ধন আবেদন এবং
- জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদন
এখন জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য উপরে উল্লেখিত অপশনগুলো থেকে ‘জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদন’ অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে পরবর্তী অপশনে আপনার সামনে নতুন একটি ইন্টারফেস ওপেন হবে।
এখন আপনি স্ক্রোল করে নিচে নামুন। তাহলে জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জন্ম তারিখ অপশন দেখতে পাবেন। এখন আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী অপশন দুটো সঠিকভাবে পূরণ করুন এবং নিচের ক্যাপচাটি সঠিকভাবে বসিয়ে ‘অনুসন্ধান’ অপশনে ক্লিক করুন।
আরো পড়ুনঃ নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন পদ্ধতি- ২০২৪
তাহলে নিচে আপনার নাম, আপনার পিতা-মাতার নাম দেখতে পাবেন। এখন আপনি পাশে থেকে ‘নির্বাচন করুন’ অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে এবং সেখানে ‘আপনি কি নিশ্চিত’ নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন। এখন ‘আপনি কি নিশ্চিত’ অপশনের নিচে থেকে কনফার্ম অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে এবং সেখানে এমন একটি পেইজ দেখতে পাবেন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য আপনাকে কিছু ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে। এখন আপনি সেখানে লক্ষ্য করলে ‘সর্বোচ্চ তিন বার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করা যাবে’ লেখাটি দেখতে পাবেন। অর্থাৎ, আপনি সবোর্চ্চ তিনবার জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এখন আপনি সেখানে তিনটি অপশন দেখতে পাবেন। যেমন:
- বিষয়
- চাহিত সংশোধিত তথ্য এবং
- সংশোধনের কারণ
তাহলে ‘বিষয়’ অপশনে ক্লিক করে আপনি যে তথ্যটি সংশোধন করতে চান সেটা সিলেক্ট করুন। তারপর চাহিত সংশোধিত তথ্য এবং সংশোধনের কারণ নির্বাচন করুন। তাহলে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুসারে অপশন গুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন। এখানে আপনি চাইলে একই সাথে একাধিক তথ্য সংশোধন আবেদন করতে পারবেন।
তাহলে তথ্য সংশোধন করার জন্য ‘আরো তথ্য সংশোধন করুন’ অপশনে ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে ডকুমেন্ট গুলো এড করুন। তারপর নিচে আপনি তিনটি অপশন দেখতে পাবেন। যেমন:
- জন্ম স্থানের ঠিকানা সংশোধন
- স্থায়ী ঠিকানা সংশোধন এবং
- বর্তমান ঠিকানা সংশোধন
এখন আপনি চাইলে উপরে উল্লেখিত যেকোনো তথ্য সংশোধন করতে পারবেন। তাহলে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী অপশন সিলেক্ট করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি ‘বর্তমান ঠিকানা সংশোধন’ করতে চাচ্ছেন। তাহলে ‘বর্তমান ঠিকানা সংশোধন’ অপশনে টিক চিহ্ন দিয়ে দিন। তাহলে নিচে আপনার বর্তমান ঠিকানা সংশোধন অনুযায়ী অনেকগুলো অপশন দেখতে পাবেন। যেমন:
- দেশ
- বিভাগ
- ডাকঘর (বাংলায়)
- ডাকঘর (ইংরেজিতে)
- গ্রাম/ পাড়া/ মহল্লা
- গ্রাম/ পাড়া/ মহল্লা (ইংরেজিতে)
- বাসা ও সড়ক (নাম, নম্বর) এবং
- বাসা ও সড়ক (নাম, নম্বর) (ইংরেজিতে)
তাহলে আপনি আপনার ‘বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী’ উপরে উল্লেখিত অপশন গুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন। এখানে অবশ্যই স্টার দেওয়া অপশন গুলো আপনাকে পূরণ করতে হবে। অন্যথায়, আপনার আবেদনটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
তবে সবচেয়ে জরুরী হলো আপনি যে বিষয়ে সংশোধন করতে চান তার বিপরীতে আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে। নিম্নে কিছু বিষয়ের পরিবর্তন ও ডকুমেন্ট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
- নামের বানান: আপনি যদি নামের বানান পরিবর্তন/সংশোধন করতে চান। তাহলে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট অথবা পাসপোর্ট কিংবা এনআইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
- অ্যাড্রেস পরিবর্তন: আবার আপনি যদি আপনার ঠিকানা বা এড্রেস পরিবর্তন করতে চান। তাহলে আপনাকে ইউটিলিটি বিলের কপি বা জমির দলিল কিংবা খাজনা পরিশোধ রশিদ দেখতে হবে।
- পিতা মাতার নাম সংশোধন: আপনি যদি আপনার পিতা মাতার নাম সংশোধন করতে চান। তাহলে আপনার পিতা-মাতার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন হবে। অথবা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
এখন আপনি যে তথ্যটি সংশোধন করত চাচ্ছেন সেটির উপর ক্লিক করুন। তারপর ‘সংযোজন’ অপশনে ক্লিক করে আপনার সংশোধিত তথ্যের ফাইনাল আপলোড করুন। ফাইল টাইপ: (JPG, PNG এবং JPEG এবং ফাইল সাইজ 2 MB ভিতরে হতে হবে)।
এখন File type অপশনে ক্লিক করে আপনি কি ডকুমেন্ট সাবমিট করেছেন সেটি সিলেক্ট করুন। এখন নিচে ‘আবেদনকারীর তথ্য’ নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন।
এখানে আপনাকে আবেদনকারীর তথ্য দিয়ে অপশনগুলো সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। তাহলে ‘আবেদনাধীন ব্যক্তির সহিত সম্পর্ক’ সিলেক্ট করুন। তারপর আবেদনকারীর নাম, ইমেইল এড্রেস এবং মোবাইল নম্বর লিখুন। এখন সকল অপশন সঠিকভাবে পূরণ করা হয়ে গেলে ‘ওটিপি পাঠান’ অপশনে ক্লিক করুন।
তাহলে আপনার মোবাইল নম্বরে একটি ভেরিফিকেশন কোড বা otp যাবে। সেই কোডটি এখানে বসিয়ে দিন এবং সাবমিট অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে এবং সেখানে আবেদনটি সফলভাবে সাবমিট হয়েছে লেখা চলে আসবে।
তারপর নিচে আবেদন পত্রের নম্বর দেখতে পাবেন। এখন আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হল আবেদনপত্রের নম্বরটি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। যখন আপনি আবেদন পত্রটি জমা দিতে যাবেন। তখন এই আবেদনপত্রের নম্বরটি প্রয়োজন হবে। এখন আপনাকে আবেদন পত্রটি প্রিন্ট করতে হবে। তাহলে নিচে থেকে ‘আবেদনপত্র প্রিন্ট’ অপশনে ক্লিক করে আবেদন পত্রটি প্রিন্ট করে নিন।
কিন্তু আপনার কাছে যদি প্রিন্টার না থাকে তাহলে আবেদন পত্রটি প্রিন্ট অপশনে ক্লিক করে ফাইল আকারে ডাউনলোড করে নিন। তারপর যেকোনো কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদনপত্র প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
এখন আপনার আবেদন পত্রটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। আবেদন পত্রটি কত তারিখে জমা দিতে হবে সেটি এখানে দেখতে পাবেন। এখন আবেদনপত্র প্রিন্ট করার পরে আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো: আপনি যেই ইউনিয়নের বাসিন্দা সেই ইউনিয়নের পরিষদে গিয়ে আবেদন পত্রটি জমা দিতে হবে।
আর আপনি যদি পৌরসভার বাসিন্দা হয়ে থাকেন। তাহলে আপনাকে আবেদন পত্রটি নিয়ে পৌরসভায় যেতে হবে। অথবা সিটি কর্পোরেশনে গিয়ে আপনাকে আবেদন পত্রটি সাথে কিছু ডকুমেন্ট এড করে জমা দিতে হবে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক আবেদন পত্রের সাথে কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে।
আবেদন পত্রের সাথে কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে
আবেদন পত্রের সাথে যে যে ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে। সেই সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নে তালিকা হিসেবে তুলে ধরা হলো:
- সাধারণত আপনি যদি আপনার নাম, আপনার পিতা-মাতার নাম অথবা জন্ম তারিখ সংশোধন করতে চান। তাহলে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি ছবি, আপনার পিতা মাতার জন্ম সনদপত্রের ফটোকপি, স্টিকার কার্ড অথবা হাসপাতাল কর্তৃক জন্ম সনদ প্রয়োজন হবে।
অর্থাৎ, আপনি যে তথ্য সংশোধন করতে চাচ্ছেন। সেটির এগিনেস্টে তথ্য আপলোড করতে হবে। তাহলে আবেদনপত্রের সাথে আপনি আপনার সংশোধিত তথ্য অনুযায়ী ডকুমেন্ট সংযুক্ত করুন। তারপর ডকুমেন্টগুলো একসাথে সংযুক্ত করে ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশন নিয়ে জমা দিতে হবে।
এখন সকল ডকুমেন্ট গুলো জমা দেওয়ার পরে অফিস কর্তৃপক্ষ আপনার ডকুমেন্টগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবেন। এখন আপনার সকল ডকুমেন্ট যদি সঠিক থাকে। তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধনটি সংশোধন করে দিবে এবং পরবর্তীতে আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস চলে আসবে।
তারপর আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো: আপনার মোবাইলে আসা এসএমএসের তারিখে গিয়ে জন্ম নিবন্ধনের সংশোধিত কপি নিয়ে আসতে হবে।
আশা করি, আজকের আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন। কিভাবে হাতে থাকা স্মার্টফোনটি ব্যবহার করে খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে হয়। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় এবং কোন জায়গায় গিয়ে আবেদন পত্রটি জমা দিতে হয় ইত্যাদি। এরকম আরোও গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।